ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান

০৪ মে ২০২৪, ০১:০১ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ০১:০১ এএম

ফজরের নামাজের বিশেষ দশটি ফযীলত নিয়ে আমরা গত নিবন্ধে আলোচনা করছিলাম। পাঁচটি ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। আজ বাকীগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। ছয়. সারা রাত ইবাদতের সওয়াব অর্জন করুন। উসমান ইবনে আফ্ফান রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি এশার নামায জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত নামাযে দ-ায়মান থাকল। যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতে আদায় করল সে যেন সারা রাত নামায আদায় করল। (সহীহ মুসলিম : ৬৫৬)।

সাত. ফজরের নামায আদায়কারী লাভ করবে আল্লাহর দীদার। সাহাবী জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন : আমরা একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা অচিরেই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদ দেখতে পাচ্ছ। তোমরা আল্লাহকে দেখতে কোনো প্রকার ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। যদি এ নিআমত লাভ করতে চাও, তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামাযের (অর্থাৎ ফজর ও আসরের) প্রতি যথাসাধ্য যতœবান হও (কোনো প্রকার গাফলতের শিকার হয়ো না এবং শয়তানের কাছে পরাস্ত হয়ো না)। অতঃপর নবীজী (সা.) কুরআনে কারীমের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন : এবং স্বীয় রবের সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকুন- সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে। [সূরা ত্ব-হা : ১৩০] (সহীহ মুসলিম : ৬৩৩)।

আট. জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা। উমারা ইবনে রুআইবা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামায আদায় করে সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম : ৬৩৪)। মানুষের বড় বড় সফলতার একটি হল, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারা। জান্নাতের আশাও যেমন থাকবে, তেমনি জাহান্নাম থেকে বাঁচার আকুতিও থাকতে হবে; তবেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন : যাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাতে দাখিল করা হল সে-ই সফলকাম হল। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)।

নয়. দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝের সবকিছুর চেয়ে দামী কিছু পেতে চাই। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ফজরের দুই রাকাআত নামায (আমার কাছে) দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে সবকিছু থেকে উত্তম। (সহীহ মুসলিম : ৭২৫)। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ দুনিয়া কামাই করার জন্য কত পরিশ্রমই না করে। অথচ এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। অতি শীঘ্রই তা শেষ হয়ে যাবে। অপরদিকে আখেরাত চিরস্থায়ী। একজন মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরকালের জীবন শুরু হবে; কিন্তু শেষ হবে না কোনোদিন-অনিঃশেষ। এই জীবনের পাথেয় হল ইবাদত ও আমল। ফজরের দুই রাকাত নামায এই অনিঃশেষ জীবনের এক মূল্যবান পাথেয়।

দশ. কিয়ামতের দিন নূরপ্রাপ্তির সুসংবাদ। আখেরাত জীবনের কঠিন কঠিন ঘাঁটি পার হওয়ার জন্য প্রয়োজন নূর ও আলোর। রাতের শেষ অন্ধকারে আদায় করা এই নামায আমার জন্য শেষ দিবসের আলো হবে; যা আমাকে জান্নাত পর্যন্ত পথ চলতে সাহায্য করবে; যা না হলে আমি সেখানের অন্ধকারে হারিয়ে যাব। যদি নূরের অধিকারী হতে পারি, তাহলেই পৌঁছতে পারব পরম কাক্সিক্ষত জান্নাতে। বুরায়দা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : অন্ধকারে পায়ে হেঁটে (ফজরের নামায আদায় করতে) মসজিদে গমনকারী ব্যক্তিদেরকে সুসংবাদ দাও- কিয়ামতের দিন তাদেরকে পরিপূর্ণ নূর দান করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৫৬১)।

আমরা নবীজীর শেষ রাতের ইবাদতের কথা শুনি এবং নিজের জন্য তা কামনা করি; কিন্তু এটার প্রতি আমাদের মোটেও ভ্রুক্ষেপ নেই যে, নবীজী এশার পর দ্রুত ঘুমিয়ে যেতেন এবং আমাদেরকেও দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে বলেছেন। ফলে এশার পর গল্প-গুজবে লিপ্ত হওয়া মাকরূহ। তাই আসুন রাতে আগে শুয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি, তাহাজ্জুদ আদায় করি এবং জামাতের সাথে ফজর আদায় করে লাভ করি দুনিয়া ও আখেরাতের নূর ও আলো। গাফলতকালের দুই ওয়াক্ত নামায যে নিয়মিত আদায় করতে পারে, তার জন্য বাকি নামাযগুলো আদায় করা আর তেমন কঠিন থাকে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল নামায নিয়মিত জামাতের সাথে মসজিদে গিয়ে আদায় করার তাওফীক দান করুন- আমীন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু